16 Oct 2011 09:11:51 PM Sunday
আবার সাগরে জাহান মণির নাবিকরা
রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চট্টগ্রাম: ভয়ংকর জলদস্যুর আতঙ্ক হার মেনেছে জীবিকার তাগিদ আর সাগরের নেশার কাছে। তাই-তো তিনমাস সোমালি জলদস্যুদের হাতে বন্দী থেকে অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করার পরও বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মণি’র অধিকাংশ নাবিকই আবারও ফিরে গেছেন সাগরে।
এমভি জাহান মনি’র নাবিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে নাবিকদের বর্তমান অবস্থার বিভিন্ন তথ্য।
গত ৫ ডিসেম্বর গ্রিসে যাবার পথে ভারত মহাসগরের গালফ অব এডেন-এ ২৫ নাবিক ও এক নাবিকের স্ত্রী মিলে ২৬ জনসহ এমভি জাহান মণি জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। ছিনতাইয়ের একুশ দিন পর ১৪ মার্চ জাহাজটি ছেড়ে দিলে ২১ মার্চ চট্টগ্রামে ফিরে আসেন তারা।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপ ম্যানেজমেণ্ট লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, এমভি জাহান মণি’র ১২ জন নাবিক আবারও আমাদের প্রতিষ্ঠানেই যোগ দিয়েছেন। কয়েকজন বিভিন্ন জাহাজে করে দেশের বাইরেও গেছেন।
তবে এমভি জাহান মণি’র দুই শীর্ষ কর্মকর্তা, জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার মতিউল মওলা-দুজনই জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নতুন কোনো জাহাজে যোগ দেননি। মতিউল মওলা জলদস্যুদের হাতে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখা শুরু করেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বইমেলায় বইটি প্রকাশ পাবে বলে তার আশা।
মতিউল মওলা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা চায় না আমি আর এ পেশায় ফিরে যাই। তাই প্রাইভেট মেরিন একাডেমিতে শিক্ষকতা করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেব বলে ভাবছি।
এমভি জাহান মণির চিফ অফিসার আবু নাসের আবদুল্লাহ ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি সরওয়ার জাহানে যোগ দিয়েছেন। সেকেন্ড অফিসার জি এম নূর-ই-আলম ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পাবার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই জি এম শাহজাহান।
থার্ড অফিসার কামরুল হোসাইনও যোগ দিয়েছেন ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি ফাতিমা জাহানে। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে থাইল্যান্ড ও ভারত হয়ে ভিয়েতনামে গিয়ে সেখান থেকে সিমেণ্ট ক্লিংকার নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরেছে।
কামরুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, জাহাজটি গালফ অব এডেন রুট দিয়ে গন্তব্যে যায়নি। সেজন্য জাহাজটিতে যোগ দিয়েছিলাম। আর্মড গার্ড না দিলে ওই রুট দিয়ে যাবে এমন কোন জাহাজে চাকরি করব না।
এমভি জাহান মণির ডেক ক্যাডেট মো. শরিফুল ইসলাম মুক্তি পাবার দেড় মাস পর পিএইচপি গ্রুপের ক্যালিটন-টু নামের একটি জাহাজে যোগ দিয়ে বর্তমান আছেন ভিয়েতনামে। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার আবুল খায়ের গ্রুপের একটি জাহাজে যোগ দিয়ে বর্তমানে আছেন থাইল্যান্ডে।
আরেক সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন যোগ দিয়েছেন ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি জাহানে। মাইন উদ্দিন সোমালিয়ায় বন্দী থাকা অবস্থায় জন্ম নেয় তার শিশুপুত্র আরাফ বিন মাইনউদ্দিন। স্ত্রী সারজিনা চৌধুরী লিজা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আরাফের আব্বা যাবার সময় ছেলেকে ধরে খুব কাঁদছিলেন। কিন্তু কি করব। যেতে তো হবেই। না হলে সংসার চলবে কি করে।`
সোমালি জলদস্যুদের সহানুভূতি পেতে মুসলমান সেজেছিলেন এমভি জাহান মণির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত কুমার মন্ডল। দেশে ফিরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আর কখনো এ পেশায় ফিরবেন না। কিন্তু এখন শুধু পেশায় ফেরা নয়, পদোন্নতি পেতে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ছয় মাসের কোর্স করছেন।
ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তারিকুল ইসলাম সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি জাহাজে যোগ দিয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। জানুয়ারিতে তিনি দেশে ফিরবেন। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে তার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে, জানালেন তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী মাহফুজা বেগম।
ব্রেভ রয়েলের জাহাজে যোগ দেওয়া অন্য নাবিকদের মধ্যে আছেন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সাহাবু আলম, সিম্যান এমদাদ হোসাইন, আব্দুল্লাহ ফাত্তাহ ও রবিউল ইসলাম, ফায়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস, জেনারেল স্টুয়ার্ড জসিম উদ্দিন, ইঞ্জিন ফিটার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং ডেক ফিটার মোহাম্মদ ইদ্রিস।
এছাড়া জুনিয়র ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসাইন ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি মা সালেহা বেগমে যোগ দিয়ে বর্তমানে আছেন চীনে।
এমভি জাহান মণি’র সর্বকনিষ্ঠ নাবিক ইঞ্জিন ক্যাডেট শাহরিয়ার রাব্বি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও বাবা-মা তাকে আর এ পেশায় ফিরতে দিচ্ছেন না।
এমভি জাহান মণির সীম্যান রুহুল আমিন ও গ্রীজার ফখরুল ইসলামও কোন জাহাজে যোগ দেননি।
আবার সাগরে জাহান মণির নাবিকরা
রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চট্টগ্রাম: ভয়ংকর জলদস্যুর আতঙ্ক হার মেনেছে জীবিকার তাগিদ আর সাগরের নেশার কাছে। তাই-তো তিনমাস সোমালি জলদস্যুদের হাতে বন্দী থেকে অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করার পরও বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মণি’র অধিকাংশ নাবিকই আবারও ফিরে গেছেন সাগরে।
এমভি জাহান মনি’র নাবিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে নাবিকদের বর্তমান অবস্থার বিভিন্ন তথ্য।
গত ৫ ডিসেম্বর গ্রিসে যাবার পথে ভারত মহাসগরের গালফ অব এডেন-এ ২৫ নাবিক ও এক নাবিকের স্ত্রী মিলে ২৬ জনসহ এমভি জাহান মণি জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। ছিনতাইয়ের একুশ দিন পর ১৪ মার্চ জাহাজটি ছেড়ে দিলে ২১ মার্চ চট্টগ্রামে ফিরে আসেন তারা।
জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেভ রয়েল শিপ ম্যানেজমেণ্ট লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, এমভি জাহান মণি’র ১২ জন নাবিক আবারও আমাদের প্রতিষ্ঠানেই যোগ দিয়েছেন। কয়েকজন বিভিন্ন জাহাজে করে দেশের বাইরেও গেছেন।
তবে এমভি জাহান মণি’র দুই শীর্ষ কর্মকর্তা, জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার মতিউল মওলা-দুজনই জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নতুন কোনো জাহাজে যোগ দেননি। মতিউল মওলা জলদস্যুদের হাতে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখা শুরু করেছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বইমেলায় বইটি প্রকাশ পাবে বলে তার আশা।
মতিউল মওলা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা চায় না আমি আর এ পেশায় ফিরে যাই। তাই প্রাইভেট মেরিন একাডেমিতে শিক্ষকতা করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেব বলে ভাবছি।
এমভি জাহান মণির চিফ অফিসার আবু নাসের আবদুল্লাহ ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি সরওয়ার জাহানে যোগ দিয়েছেন। সেকেন্ড অফিসার জি এম নূর-ই-আলম ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি পাবার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই জি এম শাহজাহান।
থার্ড অফিসার কামরুল হোসাইনও যোগ দিয়েছেন ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি ফাতিমা জাহানে। জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে থাইল্যান্ড ও ভারত হয়ে ভিয়েতনামে গিয়ে সেখান থেকে সিমেণ্ট ক্লিংকার নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরেছে।
কামরুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, জাহাজটি গালফ অব এডেন রুট দিয়ে গন্তব্যে যায়নি। সেজন্য জাহাজটিতে যোগ দিয়েছিলাম। আর্মড গার্ড না দিলে ওই রুট দিয়ে যাবে এমন কোন জাহাজে চাকরি করব না।
এমভি জাহান মণির ডেক ক্যাডেট মো. শরিফুল ইসলাম মুক্তি পাবার দেড় মাস পর পিএইচপি গ্রুপের ক্যালিটন-টু নামের একটি জাহাজে যোগ দিয়ে বর্তমান আছেন ভিয়েতনামে। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার আবুল খায়ের গ্রুপের একটি জাহাজে যোগ দিয়ে বর্তমানে আছেন থাইল্যান্ডে।
আরেক সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন যোগ দিয়েছেন ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি জাহানে। মাইন উদ্দিন সোমালিয়ায় বন্দী থাকা অবস্থায় জন্ম নেয় তার শিশুপুত্র আরাফ বিন মাইনউদ্দিন। স্ত্রী সারজিনা চৌধুরী লিজা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আরাফের আব্বা যাবার সময় ছেলেকে ধরে খুব কাঁদছিলেন। কিন্তু কি করব। যেতে তো হবেই। না হলে সংসার চলবে কি করে।`
সোমালি জলদস্যুদের সহানুভূতি পেতে মুসলমান সেজেছিলেন এমভি জাহান মণির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত কুমার মন্ডল। দেশে ফিরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আর কখনো এ পেশায় ফিরবেন না। কিন্তু এখন শুধু পেশায় ফেরা নয়, পদোন্নতি পেতে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ছয় মাসের কোর্স করছেন।
ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তারিকুল ইসলাম সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি জাহাজে যোগ দিয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। জানুয়ারিতে তিনি দেশে ফিরবেন। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে তার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে, জানালেন তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী মাহফুজা বেগম।
ব্রেভ রয়েলের জাহাজে যোগ দেওয়া অন্য নাবিকদের মধ্যে আছেন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সাহাবু আলম, সিম্যান এমদাদ হোসাইন, আব্দুল্লাহ ফাত্তাহ ও রবিউল ইসলাম, ফায়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস, জেনারেল স্টুয়ার্ড জসিম উদ্দিন, ইঞ্জিন ফিটার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং ডেক ফিটার মোহাম্মদ ইদ্রিস।
এছাড়া জুনিয়র ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসাইন ব্রেভ রয়েলের জাহাজ এমভি মা সালেহা বেগমে যোগ দিয়ে বর্তমানে আছেন চীনে।
এমভি জাহান মণি’র সর্বকনিষ্ঠ নাবিক ইঞ্জিন ক্যাডেট শাহরিয়ার রাব্বি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও বাবা-মা তাকে আর এ পেশায় ফিরতে দিচ্ছেন না।
এমভি জাহান মণির সীম্যান রুহুল আমিন ও গ্রীজার ফখরুল ইসলামও কোন জাহাজে যোগ দেননি।
No comments:
Post a Comment